বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১৮ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক:
সারাবিশ্বের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা প্যারিসভিত্তিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের (আরএসএফ) করা বার্ষিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানে গত ছয় বছরে ক্রমেই অবনতি হতে দেখা যাচ্ছে। অবনতির এই ধারা লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ২০১৬ সাল থেকে এক ধাপ, দুই ধাপ করে পেছালেও সবশেষ ২০২২ সালের হিসেবে এক লাফে ১০ ধাপ পিছিয়েছে।
এই নিম্নগামিতার কারণ হিসেবে সংবাদমাধ্যমগুলো সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ‘বিভিন্ন আইনের অপপ্রয়োগ’ এবং ‘সরকারের ভিন্নমত দমনের নানা প্রচেষ্টাকে’ দায়ী করছেন। তবে আরএসএফ-এর প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থানের অবনমনকে ‘আপত্তিকর’ ও ‘বিদ্বেষপ্রসূত’ বলে মন্তব্য করেছিলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
গত বছরের ৫ মে সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, প্যারিসের এ সংগঠনটি বাংলাদেশের গণমাধ্যম নিয়ে অসত্য, ভুল ও মনগড়া রিপোর্ট করে। চলতি বছর ১৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকার এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অনেক উন্নয়নশীল দেশের জন্য উদাহরণ।’
সূচকে ধাপে ধাপে অবনতি:
কোন দেশ গণতান্ত্রিকভাবে কতটুকু শক্তিশালী, সেটি পরিমাপে যেসব নির্দেশক রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচক। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের করা এই সূচকে ২০২২ সালে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ছিল ১৬২তম স্থানে, যা ২০২১ সালে ছিল ১৫২তম।
অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ১০ ধাপ পিছিয়ে গেছে বাংলাদেশের অবস্থান। ২০২০ সালের সূচকে ছিল ১৫১তম। এর আগে ২০১৯ সালে ১৫০তম, ২০১৮ ও ২০১৭ সালে ১৪৬তম, ২০১৬ সালে ১৪৪তম, ২০১৫ ও ২০১৪ সালে ১৪৬তম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। অর্থাৎ, শেষ ছয় বছরে বাংলাদেশের অবস্থান দু-চার ধাপ করে অবনতি হলেও ২০২২ এর হিসেবে তা এক ধাক্কায় ১০ ধাপ নেমে যেতে দেখা যাচ্ছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণমাধ্যম কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে, তার ভিত্তিতে ২০০২ সাল থেকে আরএসএফ এই সূচক প্রকাশ করে আসছে। ২০১৩ সাল থেকে এই সূচকে বাংলাদেশ আছে।
আরএসএফের প্রতিবেদনে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিষয়টি পাঁচটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। সেগুলো হলো অতি সঙ্কটজনক, অসুবিধাজনক, সমস্যামূলক, সন্তোষজনক ও ভালো। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ আছে অতি সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে।
বাংলাদেশের সাংবাদিকতার পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আরএসএফ তাদের প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন সরকারের নেতাকর্মী-সমর্থকরা প্রায়ই সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন। তাদের সংবাদ প্রকাশ ঠেকাতে মামলা দায়েরসহ নানাভাবে হয়রানি করা হয়। কিন্তু গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় সংবাদমাধ্যম বা সাংবাদিকের ওপর এমন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ চাপ প্রয়োগের কঠিন সমালোচনা করেছে সংস্থাটি।
এদিকে নির্বাচনের সময় যত এগিয়ে আসবে, এই পরিস্থিতি আরো অবনতি হবে বলে মনে করেন আর্টিকেল নাইনটিনের এশীয় আঞ্চলিক পরিচালক ফারুক ফয়সাল। ‘নির্বাচন যদি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হয়। তাহলে বিদেশী পর্যবেক্ষকরা সেটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করবেন। তখন সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচকে আরো অবনতি হবে।’ তবে বাংলাদেশের সংবিধানে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে।
সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে তার মধ্যে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, আদালত অবমাননা, মানহানি, অপরাধ সঙ্ঘটনে প্ররোচনা।
আইনের মাধ্যমে দমন:
সাংবাদিকতায় ভিন্নমত দমনে সরকার আইনি কাঠামোয় বড় ধরণের পরিবর্তন এনেছে বলে জানান ডেইলি স্টারের সম্পাদক এবং সম্পাদক পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজ আনাম। তিনি জানান, বাংলাদেশে বর্তমানে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে নয়টি আইন প্রয়োগ হচ্ছে তার সবশেষ সংস্করণ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। আরো চারটি আইন খসড়া পর্যায়ে আছে। আরো নতুন নতুন আইন প্রণয়নে তোড়জোড় চলছে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অহরহ এসব আইনের অপব্যবহার হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে দুর্নীতি, চুরি, পাচার, মানি লন্ডারিংয়ের বিরুদ্ধেও এত আইন নেই, যতোটা সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে রয়েছে।’ মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে ৮৪টি মামলা রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বাংলাদেশে যত আইন হয়েছে এর বেশিরভাগ ১৮৬০ সালের ফৌজদারি দণ্ডবিধি আইন দ্বারা প্রভাবিত বলে তিনি মনে করেন।
আইনটির ১২৪ এর ‘ক’ ধারায় রাষ্ট্রদ্রোহের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি কথায়, লিখে, কোন চিহ্ন বা প্রতীক দিয়ে সরকারের প্রতি ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে তাকে যাবজ্জীবন বা এর কম মেয়াদের কারাদণ্ডে এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। অর্থাৎ সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না।
এ ব্যাপারে মাহফুজ আনাম বলেন, ‘এই আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে ১৬৩ বছর আগে, ব্রিটিশ উপনিবেশ আমলের। ব্রিটিশ কমনওয়েলথের প্রায় সব দেশ এই আইন অনেক আগেই বাতিল করেছে। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ও পাকিস্তানে লাহোর হাইকোর্ট এই আইনকে অসাংবিধানিক বলে বাতিল ঘোষণা করেছে। শুধুমাত্র বাংলাদেশে এই আইন বা এর দ্বারা প্রভাবিত আইন প্রবলভাবে ব্যবহার হচ্ছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হলেও সেটার কোনো প্রতিফলন মুক্ত গণমাধ্যম চর্চার ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে না।’
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এসব মামলা দায়েরের কারণ হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে প্রায়ই ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণের কথা বলা হয়। কিন্তু আইনে ভাবমূর্তি, চেতনা ইত্যাদির স্পষ্ট কোনো সংজ্ঞায়ন বা ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। এতে একই কথার অনেক অর্থ দাঁড় করানো যায়, ফলে যে কেউ ইচ্ছামতো মামলা করে সাংবাদিকদের কোণঠাসা করতে পারে বলে মনে করেন মাহফুজ আনাম।
ভাবমূর্তি, চেতনার মতো বিমূর্ত ধারণা অজুহাত হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে জানান ফারুক ফয়সাল।
বড় খড়গ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন:
বাংলাদেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করার ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে ‘সবচেয়ে বড় খড়গ’ বলছেন তথ্য ও মত প্রকাশের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন আর্টিকেল নাইনটিনের এশীয় আঞ্চলিক পরিচালক ফারুক ফয়সাল।
২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে আইনটি প্রণয়নের সময় সরকারের একাধিক মন্ত্রী বলেছিলেন, ডিজিটাল মাধ্যমে অপরাধ দমন করত বিশেষ করে গুজব ও মিথ্যা অপপ্রচার বন্ধ করতেই এই আইন করা হয়েছে। এটি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কোনো আইন নয়।
কিন্তু সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা যায় উল্টো চিত্র। আর্টিকেল নাইনটিনের তথ্যমতে, গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের জেরে গত বছরের প্রথম ১১ মাসে ৬০ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের হয়। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ১৬ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়।
আবার সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৬ মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৮৯০টি মামলা হয়। এর মধ্যে, সর্বোচ্চ ১৩.৬৮% মামলা হয়েছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মামলা দায়ের করে, ক্ষমতাসীন কোনো সংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল।
এ নিয়ে বিবিসি বাংলাকে ফারুক ফয়সাল বলেন, ‘সাংবাদিকদের মেরে যদি ছাদ থেকে ফেলা দেয়া হয়, রাতের বেলা সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে যায়, ২০ ঘণ্টা খবর থাকে না। তখন সেই দেশের সাংবাদিকতার নিরাপত্তা তো প্রশ্নের মুখে পড়বেই। এভাবে তো গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে উন্নতি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সবচেয়ে উদ্বেগের দিক হলো ডিজিটাল মাধ্যমে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি দণ্ডবিধি অনুযায়ী নেয়া যায় এবং আইনটির বেশির ভাগ ধারা জামিন অযোগ্য। অর্থাৎ কোনো সাংবাদিক অভিযুক্ত হলে তাকে কারাগারে থেকে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হয়।
এই আইনের মাধ্যমে এক ধরনের ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছে, যার কারণে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রশ্নে বাংলাদেশ এক অবরুদ্ধ অবস্থায় আছে বলে মনে করেন ফারুক ফয়সাল। তার মতে, ‘আইনের অনেক ধারা বেশ অস্পষ্ট। একজনের বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ উঠলে, ওই ব্যক্তি ছাড়া আরো ১৪ জন মামলা ঠুকে দেয়।’ এই প্রবণতা চলতে থাকলে আগামী দিনে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার আরো অবনতি ঘটবে এবং এ স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন হবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
গণমাধ্যমের প্রতি ‘শত্রুসুলভ’ দৃষ্টিভঙ্গি:
‘সরকারের সার্বক্ষণিক মনে হয় সাংবাদিকরা সব সময় দেশ, সরকার ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে কাজ করছে। সরকারকে গণমাধ্যমের প্রতি এমন দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে’ বলছেন ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম। ‘সরকার যদি ধরেই নেয় সমালোচনা মানে বিরোধিতা, তাহলে এগোনোর পথ নেই’ বলেন তিনি। বরং তিনি মনে করেন বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলো বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনার মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারকে সহায়তা করছে। সরকারের গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলো নজরে আনলে অনেক খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারতো বলে তিনি মনে করেন।
সরকার সব ধরণের ভিন্নমতকে শত্রু মনে করে বলে জানান ফারুক ফয়সাল। তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যম ভিন্নমত পোষণ করলেই তাদের ওপর খড়গ নেমে আসে। সাংবাদিকদের ওপর কারা আক্রমণ করছে এটি খেয়াল করলে দেখা যাবে এরা হয় সরকারদলীয় কর্মী, সমর্থক, না হলে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল। তাদের মানসিকতায় পরিবর্তন না হলে এমন পরিস্থিতি চলতেই থাকবে।’
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের এই নিম্নগামিতা বন্ধ করতে সরকারের ভিন্নমত সহ্য করার ক্ষমতা থাকতে হবে এবং সরকারকে বিবেচক হয়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
কারণ কোনো সরকার দেশের মালিকানায় থাকে না বরং তারা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকে। আবার বাংলাদেশের কিছু গণমাধ্যম ও সাংবাদিক সংগঠন রাজনৈতিক ধারায় বিভক্ত হয়ে মূলধারার জনপ্রিয় গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে লেগেছে বলে তিনি মনে করেন।
গণমাধ্যম বন্ধ:
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায়, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংবাদপত্রকে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয় এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামোয় সংবাদপত্র সার্বভৌম ক্ষমতা ভোগ করে। কিন্তু এই সংজ্ঞার বিপরীত রূপ দেখা যায় সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়ার খবরে।
সবশেষ চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি ‘দৈনিক দিনকাল’ এর প্রকাশ বন্ধ করে দেয়া হয়। এই গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, এর প্রকাশক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, একজন দণ্ডিত আসামি। এবং বাংলাদেশের আইনে একজন দণ্ডিত অপরাধী কখনো গণমাধ্যমের প্রকাশক হতে পারেন না। এই অভিযোগে গত বছরের ২৬শ নভেম্বর পত্রিকাটির প্রকাশনা বাতিলের আদেশ জারি করে ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।
তবে তারেক রহমান এই পদ থেকে ২০১৬ সালেই পদত্যাগ করেছিলেন বলে দিনকালের পক্ষ থেকে জানানো হয়। পত্রিকাটির কর্তৃপক্ষ গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে এবং একই সাথে তারা প্রকাশনাও চালিয়ে যায়।
এরপর ১৯ ফেব্রুয়ারি, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল দৈনিক দিনকালের প্রকাশনা বন্ধের বিরুদ্ধে করা আপিলটি বাতিল করে দেয়। সেদিনই অনলাইনে পত্রিকাটির সবশেষ সংস্করণ বের হয়। এর পর থেকে আর সেখানে নতুন কোনো খবর প্রকাশিত হয়নি।
সে সময় নিউইয়র্কের কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টের (সিপিজে) প্রোগ্রাম ডিরেক্টর কার্লোস মার্টিনেজ ডি লা সেরনা গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে দৈনিক দিনকাল বন্ধ করে দেয়ার অর্থ হচ্ছে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর স্পষ্ট আক্রমণ।’
এর আগে ২০১৩ সালের ৫ মে বেসরকারি টিভি চ্যানেল দিগন্ত টেলিভিশন ও ইসলামিক টিভির সম্প্রচার সাময়িক বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। তাদের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্বেষ ও গুজব ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়।
২০১১ সালের আগস্টে অনলাইনভিত্তিক সংবাদসংস্থা ‘শীর্ষ নিউজ ডট কম’-এর প্রকাশনা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। মূলত একটি মন্ত্রণালয়ের কিছু কথিত দুর্নীতির খবর প্রকাশ নিয়ে সরকারের সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন পত্রিকাটির সম্পাদক। পরে তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ দুটি মামলা দায়ের হলে তিনি গ্রেফতার হন এবং সংবাদমাধ্যমটির প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। এর আগের বছরের এপ্রিলে বেসরকারি টিভি চ্যানেল ‘চ্যানেল ওয়ান’ এর সম্প্রচার বন্ধ করে দেয় সরকার।
অভিযোগ ছিল, টেলিভিশন সম্প্রচারের যন্ত্রপাতি আমদানির নামে সেগুলো অবৈধভাবে বিক্রি করা হচ্ছিল। তবে ‘চ্যানেলটির মালিক বিরোধী দলের ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে’ – এমন খবর সে সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল।
এছাড়া বাংলাদেশের গণমাধ্যমের একটি বড় অংশ ক্ষমতাসীন দলের আস্থাভাজন ব্যবসায়ীদের অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে, যার কারণে ওইসব গণমাধ্যমের খবরে সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা ও সরকারের সুনজরে থাকা অগ্রাধিকার পাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন মতপ্রকাশ নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো। এক্ষেত্রে তারা মনে করেন, প্রভাব সৃষ্টি ও সুবিধা লাভের হাতিয়ার হিসেবে গণমাধ্যম ব্যবহার হচ্ছে।
এ বিষয়ে ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেছেন, ‘সংবাদমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া সামগ্রিকভাবে গণমাধ্যমের প্রতি সরকারের অশ্রদ্ধা এবং সার্বক্ষণিক সন্দেহের বহিঃপ্রকাশ।’
অন্যদিকে আর্টিকেল নাইন্টিনের এশীয় আঞ্চলিক পরিচালক ফারুক ফয়সাল বলছেন, ‘বিরোধী মত যে সরকার সহ্য করতে পারে না, তার প্রমাণ হলো পর পর এতগুলো গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া।’
সূত্র : বিবিসি